ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) এর মূল্যবান বাণী: জীবনের দিকনির্দেশনা

আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) এর মহামূল্যবান কিছু বাণী, যা মেনে চললে আমাদের জীবন চলার বহু পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করা একদম সহজ হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ।

 

১.

যার কথা বেশি হয়, তার ভুলও বেশি হয়।

আর যার ভুল বেশি হয়, তার লজ্জা কমে যায়।

আর যার লজ্জা কমে যায়, তার খোদাভীতিও কমে যায়।

আর যার খোদাভীতি কমে যায়, তার অন্তর মরে যায়।

 

২.

তোমার তওবা সঠিক হওয়ার নিদর্শন হল, তুমি নিজের গোনাহ (কোনটি) চিনতে পারা।

তোমার আমল সঠিক হওয়ার নিদর্শন হল, নিজের আমল নিয়ে গর্বিত ও মুগ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকা।

আর তোমার শুকরিয়া আদায় সঠিক হওয়ার নিদর্শন হল, নিজের কমতি চিনতে পারা।

 

৩.

অন্যদের মনে কী মতলব-উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে তা প্রকাশ করা নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। মানুষের মনের বিষয়গুলো স্রষ্টার কাছে ন্যস্ত কর; (কারণ) মানুষ যদি একে অপরের অন্তরে কী লুকিয়ে আছে তা সম্পর্কে অবগত হয়ে যেত, তাহলে পরস্পরে তরবারি (মারণাস্ত্র) নিয়ে মিলিত হত।

 

৪.

মানুষকে দারিদ্র্যের কারণে দোষারোপ করা যাবে না এবং তার দৈহিক কাঠামোর কুৎসা বা নিন্দা বর্ণনা করা যাবে না; কারণ এতে তার কোন হাত বা সাধ্য নেই। তবে মানুষের জবানের খারাপ ভাষা ও দুশ্চরিত্রের দোষ বর্ণনা করা যাবে (তাকে সংশোধন করার জন্য বা অন্যকে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য)।

 

৫.

আপনাকে কষ্ট দেয় এমন কিছু থেকে দূরে থাকুন। আপনার জন্য অপরিহার্য হল সৎ বন্ধু গ্রহণ করা, যদিও তা হয়তো খুব কমই পাবে। এবং আপনার বিষয় নিয়ে এমন লোকদের সাথে পরামর্শ করুন, যাঁরা আল্লাহকে ভয় করে।

 

৬.

আপনাদের জন্য আবশ্যক হল আল্লাহর (দেওয়া নিয়ামতের) স্মরণ করা; কারণ তা ঔষধতূল্য। আর বিরত থাকুন মানুষের সমালোচনা করা থেকে; কারণ তা ব্যাধিতূল্য।

 

৭.

যদি তকদিরের সকল বিষয় মানুষের কাছে পেশ করা হতো (যেন প্রত্যেকেই যার যার মত করে বেছে নিতে পারে), তারপরও মানুষ নিজের জন্য তা-ই বেছে নিত যা আল্লাহ তার জন্য মনোনীত করে রেখেছেন। আল্লাহর কসম! আমি এর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখি। আল্লাহর কসম! আল্লাহ কর্তৃক আপনার জীবনের জন্য কিছু মনোনীত করে দেওয়ার চেয়ে বেশি সুন্দর কিছুই পাবেন না। আল্লাহর মনোনীত প্রত্যেকটি বিষয়ই আপনার কল্যাণে নিবেদিত যা আপনারও অজানা। আর প্রত্যেকটি কল্যাণকর বিষয় আল্লাহর পরিচালনা মতে হয়। সুতরাং আপনি সন্তুষ্টচিত্তে বলুন: হে আমার পালনকর্তা, আমি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট আছি। আর আল্লাহ আপনার জন্য কিছু করেছেন এমন কিছুকে অপছন্দ বা ঘৃণা করবেন না; কারণ

  • বিপদে পাওয়া যায় প্রতিদান।
  • রোগে-শোকে পাওয়া যায় প্রতিদান।
  • দারিদ্র্যে পাওয়া যায় প্রতিদান।
  • সবরে পাওয়া যায় প্রতিদান।

কেননা কল্যাণের মালিক তো কল্যাণই বয়ে আনবে, এটাই স্বাভাবিক।

 

৮.

আমি চুপ থাকার কারণে একবারও লজ্জিত হইনি, কিন্তু কথার কারণে বহুবার লজ্জিত হয়েছি।

 

৯.

আপনাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে রিজিক চাওয়া থেকে বিরত না থাকে। এবং এভাবে যেন দুআ করে:

اَللّٰهُمَّ ارْزُقْنِي

হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে রিজিক দান করুন।

আর এটাও জানা আছে যে, আকাশ থেকে কখনো মানুষের জন্য স্বর্ণ বা রূপা বর্ষিত হয় না। বরং আল্লাহই একজনকে অপর জনের উসিলায় রিজিক দিয়ে থাকেন।

 

১০.

একবার ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) বজ্রপাতের আওয়াজ শুনে প্রচণ্ড কান্না করলেন। তখন তাঁর কোন এক সঙ্গী জিজ্ঞেস করলেন: হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনি কেন কান্না করলেন? তিনি উত্তরে বললেন: এটি তো আল্লাহর রহমতের আওয়াজ মাত্র। তাহলে তাঁর আযাবের আওয়াজ কেমন হবে?

 

১১.

ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) বলেছেন: হে লোক সকল, তোমরা মানুষ যাচাই করার ক্ষেত্রে তার নামায, রোযা ও দান-খায়রাতের দিকে তাকিয়ো না। বরং তার কথার সত্যতার দিকে তাকাও যখন সে কথা বলে? এবং তাঁর আমানতদারিতার দিকে তাকাও যখন তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হয়।

 

১২.

ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) বলেছেন: আপনি মানুষকে কিছুতেই চিনতে পারবেন না যদি না

  • তার সাথে সফর করেন।
  • বা তার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন।
  • বা তাকে ঋণ প্রদান করেন।
  • অথবা তার থেকে ঋণ গ্রহণ করেন।

আর (শুধু) তার কুরআন তেলাওয়াতের গুনগুনানি বা লম্বা করে সেজদা আদায় যেন (আপনার মাঝে সে সব ক্ষেত্রেই ভালো হওয়ার ভুল ধারণা জন্মিয়ে) আপনাকে প্রতারিত না করে।

 

১৩.

যদি লোকেরা আপনাকে মুসলমানদের রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার (আছে কি না এ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তাহলে আপনি বলুন যে: ওমর তো মারা গেছে।

আল্লাহ ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) কে রহম করুন, যখন তিনি (গোশতের পরিবর্তে) তেল দিয়ে বেশি রুটি খাওয়ার ফলে তাঁর পেটে (অসুখের কারণে) আওয়াজ করছিল, তখন তিনি নিজের পেটকে বলেছিলেন: তুমি যতই আওয়াজ কর বা না কর, কিছুতেই গোশতের স্বাদ নিতে পারবে না, যে পর্যন্ত না মুসলিম সন্তানেরা তৃপ্ত হয়ে খানা খেতে পারে।

 

১৪.

ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেছেন: যখন মানুষের মাঝে এমন দশটি গুণ থাকবে যার নয়টিই হল সৎকাজমূলক, তার মধ্যে একটি হল “দুশ্চরিত্র”, তাহলে এই (খারাপ) গুণটি বাকি নয়টি (ভালো) গুণকে নষ্ট করে দিবে।

 

১৫.

আপনারা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন: কেন আমরা ওমর (রা.) কে ভালোবাসি। কারণ;

  • তিনি রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গী।
  • তিনি “কেসরা”র রাজপ্রাসাদের পাঁজরসমূহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।
  • তিনি অগ্নিপূজকদের আগ্নেয়াস্ত্র নিভিয়ে দিয়েছেন।
  • তিনি আমাদের জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিজয় করে তাতে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছেন।
  • তিনি সেই মহান খলিফা যার শাসনামলে সারা বিশ্বে ন্যায়বিচার ছড়িয়ে পড়েছে।
  • তিনি সেই মহান খলিফা, যার থেকে শয়তান-অপশক্তিরাও পলায়ন করে।
  • তিনি সেই মহান পার্থক্যকারী যিনি হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করে দিয়েছেন।

 

পড়ুন: আলী (রা.) এর মূল্যবান বাণী: জীবন বদলের নসিহত

 

যদি আপনার পড়া শেষ হয়ে থাকে, তাহলে নিজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তারপর আমাদের সর্দার মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর দুরূদ ও সালাম পাঠ করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।